প্রস্থানপঙতি



প্রিয় সহচর আসলাম সজীব,

আশা করি ক্যানেডা শহরে একটু গুছায়া উইঠা হাতে একখানা পানীয় লইয়া এই বেভাঁজ পত্রখানি পড়তেছো। এই পত্রখানির জওয়াব না দিলেও চলবে এবং তা দিতে তোমারে জবরদোস্তিও করা হৈতেছে না।

যাহৌক, আমি অবশ্য সেই প্রায় ১০ বছর পরপর উঁকি দ্যাওয়া ভ্রান্ত কোন ব্যারামে বিভ্রান্ত –-- ২০০৮ এ ছিলো সিফিলিস, ২০১৯ এ হাইপারটেনশন --- জীবনযাত্রা পরীবর্তনের মনঃশারীরিক অযুহাত আরকি!! যথারীতি এই যাত্রাও ডাক্তার মুচকি হাসি ও প্ল্যাসিবো দিয়া বাসায় পাঠায় দিলেন।

যাহোক, খারাপ ও কষ্ট লাগার মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। আমার লাগতেছে কষ্ট --- খারাপ লাগার ভেতর একটা মধ্যবিত্ত ঈর্ষার ব্যপার আছে। আমাদের দুইজনের মাঝে ঐটুকু কুটচালের প্রয়োজন বহু আগেই খারিজ হয়ে গ্যাছে --- ঐযে গল্প ও স্হান আলাদা হলেও সময় ও রাস্তা তো একটাই …. ছিল আরকি !!!

এই কষ্টের অনুভুতিটা শ্বাসরুদ্ধকর ---- য্যামোনটা হিমবালিকা নামক একটি মেয়ের চলে যাওয়া বিষয়ক গল্পের সাথে সম্পর্কিত। (গল্পটা তোকে বলছি কি না …..  অবশ্য না জানলেও চলবে। )

তুই আমি যে খুব ঘনিষ্ঠ বা নিয়মিত যোগাযোগের মাঝে ছিলাম বিষয়টা কিন্ত ত্যামোন না বরং--- আমাদের নিজ নিজ বন্ধু বলয়ে আরও উদ্দীপক ঘটনাবলি নিয়েই আমরা ব্যস্ত থাকতাম, স্বাভাবিকভাবেই। কিন্ত ঐযে, গল্প ও স্হান আলাদা হলেও সময় ও রাস্তা তো একটাই …. ছিল আরকি !!! না চাইতেও অন্তরঙ্গ মূহুর্ত … রুদ্ধদুয়ার Intercourse (Intellectual Discourse) … আমার বৌয়ের ভাষায় ফ্যাদা প্যাঁচাল …. আমি অবশ্য বলি শব্দসংগম ।

ব্যপারটা  হিমবালিকা নামক একটি মেয়ের চলে যাওয়া বিষয়ক গল্পের সাথে বেশ ভালোভাবেই সম্পর্কিত ………
ফলে তোর এই না থাকাতে আমার মায়াকান্না জোড়া যথেষ্টই হাস্যকর এবং আবেগের আতিশয্য। নানা, নানী, মুন্নিয়ান্টি আর তিনি (চেহারা ও নাম খিয়াল নাই) এঁরাই সবচে বেশী ভুগবেন…... কষ্ট তো সহস্রগুণ স্বাভাবিক।
যে বুলেট বা ছুরিতে আমার নাম ল্যাখা আছে, তা তোর কাছে জমা রাখি নাই সত্য --- প্রাণাধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু সময় ও গোপনীয়তার রক্ষক কিন্ত তুইই।

হয়তো অবচেনেই আমরা একে অপরকে ম্যানিপুলেট করছি নিজেদের জীবনীর দস্তাবেজদার হিসাবে। এইটুকু অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার কোন দরকার নাই বন্ধু। আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি তো মূলত এই ব্যপারটাই।
অন্যান্য সম্পর্ক খুঁজে দ্যাখ --- স্মৃতি বা অনুভূতি বন্ধকী চোরা সুদের কারবার!!

চেতন ও অবচেতন নানা মনঃকূটনৈতিক সুদীর্ঘ বোঝাপড়া শেষে আমরা দুইটা খোলা বই, কিছুদিন একসাথে একে অপরকে গভীর মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা শেষে বেছে নেয়া পৃথক শীত, শীৎকার ও বসন্ত ।
তারপরও, তোর চলে যাওয়াটা কোন আছোঁয়া প্রেয়সীর চলে যাবার মতোন। কিছুটা রুমি-তাবরেজি, নেজামউদ্দিন-খুসরো ঘারানার, তাই না ? অথবা মুরাকামির কোন নারী চরিত্র?
তুই যা..... দোয়া রাখি বন্ধু, ভালো থাকিস।

অথচ জানিস কি, এই ভিন্ন ভিন্ন আপাত বিচ্ছিন্ন জীবনের মাঝ দিয়েই আমরা একটা সামগ্রিক জীবন যাপন করি, কীট ও পশুপাখির মতোন। অন্তত ত্রিমাত্রা উত্তীর্ণ সত্ত্বার কাছে তো তাই ই --- মানব সংগ্রাম আর তেলাপোকার সাহিত্য চর্চা একই কথা !!!

প্রেয়সীদের প্রতি অনুভুতি বিসর্জন দিতে দিতে খেয়াল ছিল না বিষণ্ণব্যালার আশ্রয় বন্ধুদেরও বিদায় দিতে হয়।
চলে যাওয়া প্রেয়সীকে উৎসর্গ করে শেষ আত্মমৈথুন করা যায় কি না জানি না, কিন্ত প্রিয় সহচরের বিদায় ব্যালায় প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে জীবনের শেষ সিগারেটটা উৎসর্গ করা যায়।
তোর কাছে হারানো ব্যবিলন, আমার সেই সুবর্ণনগরীর চাবিটা জমা রাখলাম। আরো অনেকে জানলেও এর নিগুঢ় তত্ত্ব তো কেবল তুইই জানিস।

আমার কোন ভাব বা জৈব সন্তান যদি অনুসন্ধিৎসু হয় --- ভয় নাই, তাঁদের কোন আর্থসামাজিক দায় তোমার উপর স্বভাবতই বর্তায় না --- অজানা কিছু ভেদ জানতেই তোমার কাছে আসবে তাঁরা।
তুমি যতটা পারো, নির্মোহভাবে তাঁদের সেই নগরী ঘুরায়ে দ্যাখায়ো। ভ্রমন শেষে সে গুপ্ত নগরী তোমার একান্ত মানচিত্রে লুকায়ে ফেলো আটলান্টিক এর মতন।

বিশ্বস্ত সহচরের এই তুচ্ছ উপহারটুকু নিও, এছাড়া আর কীইবা দ্যাওয়ার আছে?
রক্তের ঋণে একটু জড়ায়ে গ্যাছি। হাতে একটা যুদ্ধের ঝান্ডা জন্মসূত্রেই পায়া গ্যাছি। যদি যুদ্ধটা জিতে ফিরি, বেঁচে থাকি তদ্দিন, দ্যাখা হবেই।
ভালো থাকিস বন্ধু, অন্য আকাশে একই সূর্যের নিচে ……………………..
পুনশ্চঃ এই সরোবরই আমাদের প্রথম দ্যাখার স্মারক, মনে আছে ? গিটারটা ছাড়িস না, বাজাইস।

মৌন অপহ্নব
[আবু জার আক্কাস রচিত বিদ্যাসাগর কিবোর্ড এ ল্যাখা ]

Comments